ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ১৬/০৩/২০২৪ ৭:১৫ পিএম

জুবেইদা সুলতানা নিজের পরিচয় দেন ‘সচিবের মেয়ে’। এই পরিচয়ে বিভন্ন অভিযান অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। এরপর সেখান থেকে দামি মোবাইল, ব্যাগ, ল্যাপটপ নিয়ে সটকে পড়েন। হোটেল সোনারগাঁও, রেডিসন হোটেল ও ঢাকা ক্লাবসহ বিভিন্ন অভিজাত জায়গায় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এভাবে ৮০০ মোবাইল চুরি করেছেন জোবাইদা। চুরি করা সরঞ্জাম বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকা আয় করেছেন তিনি।

গত ১৩ মার্চ দক্ষিণখান থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জুবেইদা সুলতানা নামের ওই নারীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের একটি টিম। তার কাছ থেকে মহিলাদের ১৬টি হ্যান্ড ব্যাগ, চারটি মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ব্যাংকের পাঁচটি ক্রেডিট কার্ড, স্বার্ণালঙ্কার, বিভিন্ন সুপার শপের কার্ড ও চারটি পেনড্রাইভ উদ্ধার করা হয়েছে।

শনিবার (১৬ মার্চ) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

ডিবিপ্রধান বলেন, জুবেইদার বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব। তার বোন গ্রামীণফোনের একজন বড় কর্মকর্তা। তার এসব খারাপ অভ্যাসের জন্য তাকে পরিবার থেকে বিতারিত করা হয়েছে। ১২ বছর ধরে জুবেইদা চুরি করে আসছিলেন।

বৃষ্টির সঙ্গে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আভাসবৃষ্টির সঙ্গে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আভাস
অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মাহমুদুল হাসান জানান, জুবাইদা সুলতানার পেশা মূলত চুরি। সে বিভিন্ন পাঁচতারকা হোটেল ও রেস্টুরেন্টে পেশাজীবী সংগঠনের সভা-সিম্ফোজিয়াম, সেমিনারে ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে অংশগ্রহণ করতো। সারাদিন গুরু-গম্ভীর আলোচনার ফাঁকে চুরি করে সটকে পরতো।

জুবেইদা সুলতানা গত ৩ মার্চ ঢাকা ক্লাবে গাইনোলজিক্যাল অনকোলজী বিষয়ক এক সেমিনারে অংশগ্রহণ করে ডা. ফারহানা হকের মোবাইল, ব্যাগ ও গহনা চুরি করে। দামীসব জিনিসপত্র বিক্রি করে দিলেও ডা. ফারহানার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটি স্থানান্তর করে নেয় নিজের মোবাইলে। সেই থেকে ডা. ফারহানা সেজে ব্যবস্থাপত্র দিয়েছে রোগীদের। অবশেষে গোয়েন্দা-জালে গ্রেপ্তার হয় কথিত ডা. ফারহানা হক ওরফে জুবাইদা সুলতানা।

মাহমুদুল হাসান বলেন, স্কুল এবং কলেজ জীবন থেকেই তার চুরির এই অভ্যাস গড়ে উঠে। বাবার চাকরির সুবাদে বিভিন্ন জায়গায় তার যাতায়াত ছিলো। এক সময় পরিবার থেকে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং চুরি ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে সে চুরিকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়। বড় বড় হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং ক্লাবগুলোকে সে টার্গেট করে তাদের বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করত এবং সেখান থেকে মোবাইল, ব্যাগ, টাকা, স্বর্ণালংকার ও কসমেটিক্স ইত্যাদি চুরি করতো। বর্তমানে তার দ্বিতীয় স্বামীই তাকে এসব জায়গাতে যাওয়ার তথ্য দেয় এবং রেজিস্ট্রেশনের কাজ করে দেয়। এসব জায়গায় যাতায়াতকৃত লোকজনদের সাধারণত চুরি হওয়ার আশঙ্কা কম থাকাতে তার চুরি করতে সহজ হতো। এ পর্যন্ত সে ৭-৮ শত মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ভ্যানিটি ব্যাগ চুরি করেছে। কয়েক বছরেই সে কয়েক কোটি টাকার ওপরে আয় করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, জুবেইদা সুলতানার নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক মাদক ও চুরির মামলা রয়েছে। তার বর্তমান স্বামীও চোর চক্রের অন্যতম সদস্য। তার স্বামীর বিরুদ্ধেও চুরির মামলা রয়েছে। তার স্বামী সৌদি-আরবের একটি নম্বর ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপ চালায় এবং তাকে চুরির কাজে সহযোগিতা করে। তার স্বামী ও অন্যদের সহায়তায় চোরাই মোবাইল ফোন, ব্যাগ ও অলঙ্কার বিক্রি করতো। প্রতিটি মামলায় জামিনে বের হয়ে সে আবার একই কাজ করতো।

পাঠকের মতামত